সমুদ্র শিল্পে নিঃসরণ প্রতিরোধে নিত্যনতুন সব বিধিবিধান চালু করা হচ্ছে। বিশেষ করে জাহাজগুলোর নিঃসরণ প্রতিরোধে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ। জ্বালানি রূপান্তরের পালে হাওয়া দিতে এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতে এসেছে নতুন নিয়ম। সামনের দিনগুলোয় চালু হতে পারে আরও কঠোর বিধান। এর প্রভাবে আগামী এক দশকে রিসাইক্লিংয়ের জন্য জাহাজ বিক্রির সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। শিপিং খাতসংশিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠন বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিমকো) এমনটাই মনে করছে।
সংগঠনটি বলছে, নিঃসরণ প্রতিরোধে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনসহ (আইএমও) অন্যান্য সংস্থাগুলো যেসব নীতিমালা এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতে করতে যাচ্ছে, সেগুলো প্রতিপালনের জন্য জ্বালানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। এর ফলে নতুন নতুন সব জাহাজ নির্মাণের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে মালিকরা পুরনো জাহাজগুলোকে ভাঙার জন্য শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোর কাছে বিক্রি করবে।
অবশ্য বিমকো একটি বিষয়ে সতর্কও করে দিয়েছে। তারা বলেছে, নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে স্বাভাবিক সময়ের আগেভাগেই রিসাইক্লিংয়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে সেই জাহাজ ভাঙা শিল্পই আবার নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিমকোর চিফ শিপিং অ্যানালিস্ট নিলস রাসমুসেন বলেছেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপের ফলে অনেক জাহাজকে তাদের নির্ধারিত বয়স হয়ে যাওয়ার আগেই ভাঙার জন্য ইয়ার্ডগুলোর কাছে বিক্রি করা হবে। ২০২৩ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে মোট ৬০ কোটি ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতার ১৫ হাজারের বেশি জাহাজ রিসাইকেল করা হতে পারে। এটি গত দশ বছরের সংখ্যার দ্বিগুণ।’
বিমকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশ বছরে ৭ হাজার ৭৮০টি ও মোট ২৮ কোটি ৫০ ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতার জাহাজ ভাঙা হয়েছে। এর বেশিরভাগই (৬০ শতাংশ) নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে। একইভাবে ২০০০-এর দশকে নির্মীত জাহাজগুলো আগামী দশ বছরে জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য বড় উৎস হয়ে দাড়াবে। ধারণক্ষমতার বিচারে ১৯৯০-এর দশকের চেয়ে ২০০০-এর দশকে জাহাজ নির্মীত হয়েছে দ্বিগুণ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগামী দশকে জাহাজ ভাঙার পরিসরও বাড়বে। এদিকে ২০১০-এর দশকে জাহাজ নির্মাণ হয়েছে আগের দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। ফলে আগামী ১০ বছর-পরবর্তী থেকে ২০ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ এখনকার চেয়ে আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিমকো।
সংগঠনটি জানিয়েছে, সাধারণত বৈশ্বিক বহরে বাল্ক ক্যারিয়ার, ট্যাংকার ও কনটেইনার শিপ মিলিয়ে মোট ডিডব্লিউটির প্রায় অর্ধেক জাহাজ ২৫ বছর বয়স হয়ে গেলে রিসাইকেল করা হয়। এছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জাহাজের ৯০ শতাংশের গন্তব্য হয় শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো।