
বাল্টিক উপকূলীয় রুশ বন্দর সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে হরমুজ প্রণালীর তীরবর্তী ইরানের বন্দর আব্বাস পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগটি অনেকদিন ধরেই ঝুলে রয়েছে। অবশেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে বড় একটি বাধা দূর হতে চলেছে।
রাশিয়ার উদ্যোগ ‘ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর’ নামের মাল্টিমোডাল বাণিজ্যপথের আওতায় এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সমুদ্রপথের পাশাপাশি রেলপথেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকবে এই করিডোরে। তবে করিডোরের রেল নেটওয়ার্কটি ইরান সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে থেমে গিয়েছিল। ইরান অংশে আর কোনো কাজ হয়নি। এবার সেই অংশেই রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ১৬০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গত বুধবার (১৭ মে) রাশত-আস্তারা রেলপথ নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন দেন। রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী ভিতালি স্যাভেলিয়েভ (বামে) এবং ইরানের সড়ক ও শহর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহেরদাদ বাজ্রপাশ (ডানে) চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

নেটওয়ার্কটি চালু হলে আজারবাইজান ও ইরানের রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোয় সহজেই পণ্য পাঠাতে পারবে রাশিয়া। ২০০০ সাল থেকে এই করিডোর স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা ও নির্মাণকাজ চলে আসছে। করিডোরের উত্তরাংশে আজারবাইজানের শহর আস্তারা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ হয়ে গেছে। ইরানের সীমান্তবর্তী এই শহরে রেলপথে কার্গো পরিবহন সেবা ২০১৮ সালে শুরুও হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪ লাখ টন কার্গো ইরান সীমান্তে পৌঁছে যাচ্ছে রেলপথের মাধ্যমে। কিন্তু এরপর আর সেই সুবিধা মিলছে না।
অথচ ইরানের কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী রাশত শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হলে এই সমস্যা আর থাকে না। এই রেলপথ নির্মাণে ভৌগলিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কেবল অর্থায়নের অভাবে সেটি করা যাচ্ছিল না। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সংকটে থাকা ইরান রেলপথটি নির্মাণে অর্থায়ন করতে পারছিল না। নতুন চুক্তির অধীনে ইরান ও রাশিয়া যৌথভাবে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
ইরান এই চুক্তিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, এই চুক্তি তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে।’ রুশ সরকারও চুক্তিটি স্বাক্ষরের বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।