
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কোম্পানি ডেনমার্কের এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাবে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার সকালে এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান রবার্ট মার্সক উগলার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের সম্মতির কথা জানান। এপিএম টার্মিনালের এ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুততম সময়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় বিনিয়োগের জন্য গত এপ্রিলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বিদেশি বিনিয়োগের বিষয় তুলে ধরে বলেন, লালদিয়ায় টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্ক। সব মিলিয়ে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে বন্দরকেন্দ্রিক ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। বন্দরকেন্দ্রিক বিনিয়োগ দিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত শক্তিশালী করা যাবে। এতে একদিকে যেমন দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী হবে, তেমনি মায়ের্স্কের পথ অনুসরণ করে বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এ খাতে প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ মাইফলক হিসেবে কাজ করবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরাও এপিএম টার্মিনালের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, টার্মিনাল পরিচালনায় দক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে আসলে দেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাও একি সাথে উন্নত হবে। এ ধরণের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

বর্তমানে বাংলাদেশে তারা ২১টি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া কনটেইনার পরিবহন, গুদাম ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংসহ লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির কম-বেশি ৩০ শতাংশ কনটেইনার একাই আনা-নেওয়া করছে কোম্পানিটি।
বাংলাদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা থাকলেও টার্মিনাল পরিচালনার ব্যবসা নেই তাদের। এপিএম টার্মিনালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৭টি দেশে ৬৫টি টার্মিনাল ও বন্দর পরিচালনা করছে তারা। বাংলাদেশে লালদিয়া টার্মিনালের প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে তাদের। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও স্বয়ংক্রিয় টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় গ্রুপটি।