নবযুগে দেশের বন্দর খাতপিসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর

শিপিং খাতে নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সংশোধিত কর্মকৌশল ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের নিট-জিরো স্ট্যাটাস অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)। গত ৩-৭ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইএমওর মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন কমিটির (এমইপিসি) ৮০তম অধিবেশনে এই ঐকমত্য তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন আর দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা একই সুতোয় গাঁথা। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি। এদিকে সমুদ্র পরিবহন খাতে দেশের আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোও ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করছে।

এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দর তার বর্তমান অবকাঠামো সক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করছে। এর ওপর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বন্দরটির ওপর তৈরি হচ্ছে বাড়তি চাপ। এ কারণে বিদ্যমান অবকাঠামোর সংস্কার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হয়েছে সেই প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই।

করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টার্মিনালটি এখন নির্মাণকাজ শেষে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায়। গত ১৪ নভেম্বর টার্মিনালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরেকটি  অভ‚তপূর্ব অগ্রগতি হলো, পিসিটি পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)। ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি কনসেশন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তাদের সাথে। দেশে বন্দর টার্মিনাল পরিচালনা খাতে এটি প্রথম কোনো বিদেশি বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে এক নবদিগন্তের সূচনা হলো দেশের বন্দর খাতে।

পেছনের কথা

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে এতদিন টার্মিনাল ছিল দুটি চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) বিশেষ প্রয়োজনে গিয়ারড ভেসেলগুলোকে (যেসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন থাকে) কনটেইনার হ্যান্ডলিং সেবা দেওয়া হয়।

বন্দরের জিসিবি এলাকার জেটিগুলোর অবকাঠামোগত অবস্থা নাজুক হওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন পরিদর্শন করে পুরনো জেটি ভেঙে নতুন করে জেটি নির্মাণের তাগিদ দেন। সে লক্ষ্যে জিসিবি এলাকার পুরনো জেটিসহ ব্যাকইয়ার্ড ভেঙে এর পরিবর্তে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নতুন কনটেইনার ইয়ার্ড ও জেটি নির্মাণ ছাড়া কেসিটির নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হলে আমদানি-রপ্তানি কাজের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে আমদানি-রপ্তানির গতি নির্বিঘ্ন রাখতে কেসিটির আগেই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পিসিটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জটিলতা, প্রকল্পের প্রয়োজনে নকশা পরিবর্তন, ভ‚মি অদল-বদল, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ থেকে অনাপত্তিপত্র প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন প্রভাবক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পিছিয়ে দিয়েছে। সার্বিক বিচারে এসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে এরকম বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের দক্ষতা ও সহযোগিতায় দ্রুতগতিতে এগিয়েছে পিসিটি নির্মাণের কাজ।

নতুন প্রজন্মের টার্মিনাল

চট্টগ্রাম বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল হিসেবে শিগগির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। টার্মিনালটির অবস্থান পতেঙ্গা বোট ক্লাব ও চিটাগং ড্রাইডকের মধ্যবর্তী জায়গায়। ২৬ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত পিসিটিতে জেটি রয়েছে চারটি। এর মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে তিনটি জেটিতে। এগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার করে। এছাড়া তেল খালাসের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত ডলফিন জেটি, যেটি ২২০ মিটার দীর্ঘ।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এই অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পিসিটি নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে।

এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের যতগুলো টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে, তার সবগুলোই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা নকশায় নির্মিত। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে শুরু করে বিশদ নকশা সবকিছুই করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সুতরাং গর্ব করেই বলা যায়, পিসিটি নির্মিত হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় মেধায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে চট্টগ্রাম বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

বন্দর খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সূচনা

আগামী ২২ বছরের জন্য পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আরএসজিটিআইয়ের বাংলাদেশি সাবসিডিয়ারি আরএসজিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। গত ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) ও আরএসজিটি বাংলাদেশের মধ্যে ইকুইপ-অপারেট-ট্রান্সফার বেসিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, ওএসপি, এনইউপি, পিপিএম, পিএসসি ও আরএসজিটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেন্স ও. ফ্লো প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

রাজধানী ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কনসেশন চুক্তি আমাদের দুই দেশের যৌথ স্বপ্ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির প্রতি অবিচল অঙ্গীকারের প্রমাণ। আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের অপেক্ষায় আছি, যেখানে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। আরএসজিটি আগামী ২২ বছর এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করবে।

পিসিটির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও সৌদি বিনিয়োগ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা টার্মিনাল পরিদর্শন করেন

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি আশার আলো। স্বনির্ভর এই আধুনিক টার্মিনাল বন্দরের সক্ষমতা বাড়াবে, নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য সহজ করবে এবং কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে। এটি বিশ্ববাণিজ্যের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। আমাদের ব্যবসার জন্য বিশে^র সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। টার্মিনালটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে। কারণ ভারত, ভুটান ও নেপাল এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী পিসিটি পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় দেশটির সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জেদ্দা বন্দর ও অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনায় খ্যাতি অর্জনকারী আরএসজিটিআই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালও দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সাথে পরিচালনা করবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ ও আরএসজিটি চেয়ারম্যান আমের এ. আলিরেজা। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ছাড়াও উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএসজিটি হলো সৌদি আরবভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর। বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি টার্মিনাল অপারেটরের অন্যতম এটি, যার সম্মিলিত বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ২ কোটি টিইইউ। আরএসজিটিআইয়ের একটি ফ্ল্যাগশিপ টার্মিনাল হলো আরএসজিটি জেদ্দা। সৌদি আরব ও লোহিত সাগর উপক‚লের বৃহত্তম টার্মিনাল এটি। জেদ্দা বন্দরের এই টার্মিনালটিতে ২০২৩ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা ৩৩ লাখ টিইইউ ছাড়িয়ে যাবে। আরএসজিটিআইয়ে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ৪০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে যন্ত্রপাতি সংযোজনে ১৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে আরএসজিটিআই। ২০২৬ সালের মধ্যে এখানে চারটি শিপ-টু-শোর ক্রেন সংযোজন করবে তারা।

পিসিটি দিয়ে দেশের সমুদ্র পরিবহন খাত নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এই প্রথম কোনো বিদেশি অপারেটর বাংলাদেশে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো। এর মাধ্যমে দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা খাতে বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হলো।

কী সুবিধা এনে দেবে পিসিটি?

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের একটি যুগোপযোগী সংযোজন। কারণ এখানে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এছাড়া এটি মোহনার কাছাকাছি হওয়ায় জাহাজগুলোকে বার্থিংয়ের জন্য মূল বন্দরের তুলনায় কিছুটা কম পথ পাড়ি দিতে হবে, যার ফলে কনটেইনার পরিবহন কার্যক্রমে গতি আসবে।

টার্মিনালে রয়েছে ৮৯ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ইয়ার্ড ও রাস্তা। এই ইয়ার্ডে রাখা যাবে সাড়ে চার হাজার কনটেইনার। কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য রয়েছে পৃথক ইয়ার্ড। যেসব ট্রাক বা লরি কনটেইনার নিতে টার্মিনালের বাইরে থেকে আসবে, সেগুলো লোডিং ইয়ার্ডে যাবে এবং কনটেইনার নিয়ে আসা ট্রাক বা লরি আনলোডিং ইয়ার্ডে গিয়ে কনটেইনার নামিয়ে চলে যাবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ কাভার্ড ভ্যান পার্কিংয়ের জন্য পৃথক পার্কিং স্পেস রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ৯৮ শতাংশ রপ্তানি পণ্য এবং ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোয় (আইসিডি)। বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আইসিডিগুলোর মধ্যে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের তিনটি আইসিডি, ভারটেক্স অফডক লজিস্টিকস সার্ভিসেস লিমিটেড, ইনকনট্রেড লিমিটেড ও ইস্টার্ন লজিস্টিকস লিমিটেডের অবস্থান পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই। ফলে পিসিটি থেকে আমদানীকৃত পণ্য আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া এবং রপ্তানিমুখী পণ্য পিসিটিতে অবস্থান করা জাহাজে লোড করতে কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভার বা পরিবহনকে বন্দরের মূল জেটি এলাকায় যেতে হবে না। ফলে বন্দরের মূল জেটি ও ইয়ার্ডের পাশাপাশি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) মতো ব্যস্ততম এলাকাতেও পরিবহনের চাপ কমবে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালকে বন্দরের সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডের সাথে যুক্ত করতে পৃথক রেললাইন, লোকোমোটিভ ও বগি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই সংযোগ স্থাপন করা হলে পিসিটির ব্যাকআপ ইয়ার্ড হিসেবে সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও স্মার্ট অর্থনীতির দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ও উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং। ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করলে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের ফলে যেমন অধিক সংখ্যক জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ পাবে, তেমনি বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতাও বাড়বে। সরকারের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এছাড়া টার্মিনাল পরিচালনায় আরএসজিটি যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিদেশি অপারেটরদের আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের যে সম্ভাবনা তৈরি হলো, তা দেশের সমৃদ্ধির অভিযাত্রাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here