বাংলাদেশে মেরিটাইম বিষয়ক চর্চাকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে আট বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে বন্দরবার্তা। বাংলা ভাষায় মেরিটাইম বিষয়ক সাময়িকীর জন্য একটি মাইলফলক বৈকি! এই পথপরিক্রমায় প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে হয় বন্দরবার্তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যবৃন্দ, সচিব ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসূহকে যাদের সদিচ্ছায় সম্ভব হয়েছে এই পথচলা।
সমুদ্র অর্থনীতির প্রসারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রয়াস তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম শিল্প গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ থেকে হিন্টারল্যান্ড সংযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সমুদ্র অর্থনীতির নানাবিধ গবেষণাসহ একটি বড় পরিবর্তনের সামনে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের বন্দর পরিচালনা খাতে নবযুগের সূচনা করেছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। চট্টগ্রাম বন্দরের তৃতীয় এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) বাংলাদেশি সাবসিডিয়ারি আরএসজিটি বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের বন্দর পরিচালনা খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সূচনা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ নভেম্বর নবনির্মিত পিসিটি উদ্বোধন করেন। আরএসজিটিআইয়ের এই বিনিয়োগসহ চট্টগ্রাম বন্দরের নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের (১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা) বিশাল বিনিয়োগ আসছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই সংকটকালীন সময়েও এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের বন্দর খাত তথা অর্থনীতির সুদিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরেকটি সমস্যাসঙ্কুল বছর কাটিয়ে নতুন বছরে পা দিল বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন খাত। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য সংকট। এসব ভ‚রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে গোটা বিশ্ব টালমাটাল সময় পার করেছে। বেশ জোরেশোরেই তার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক মেরিটাইম খাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ‚রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ৬০টির বেশি দেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন, পরিবেশবান্ধব নিয়ম-নীতির প্রয়োগ, ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণ, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার জাহাজের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যহীনতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং পানামা খালের দীর্ঘমেয়াদি খরা প্রভৃতি চলতি বছর মেরিটাইম খাতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
তবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শিপিং খাতের দক্ষতা ও নিরাপত্তা বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হয়ে উঠবে। এ বছর কোনো ক্রু ছাড়া সম্পূর্ণ স্বয়ংচালিত কার্গো জাহাজ কার্যক্রম শুরু করবে। এলাইড মার্কেট রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক ২৩ দশমিক ১ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩২ সাল নাগাদ স্মার্ট পোর্টস মার্কেটের মূল্য ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছবে। প্রযুক্তি বিষয়ক মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সাল নাগাদ সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এআই এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সে বিনিয়োগ করবে। এর পাশাপাশি জাহাজকে স্বয়ংচালিত করতে, শিপিং খাতে বøকচেইন প্রযুক্তি একীভ‚ত করতে, মেরিটাইম খাতকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে সর্বোপরি সমুদ্র পরিবহনের সার্বিক উন্নয়নে চলতি বছর ইন্টারনেট অব থিংকস (আইওটি), ক্লাউড-বেসড সিস্টেম, ডিজিটাল টুইনসহ আরও অনেক প্রযুক্তি মেরিটাইম খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। সব মিলিয়ে চলতি বছর চলমান সংকট কাটিয়ে পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াই লক্ষ্য মেরিটাইম বিশ্বের। বিস্তারিত রয়েছে প্রধান রচনায়।
প্রিয় পাঠক, বন্দরবার্তার এই নিরবচ্ছিন্ন পথচলার সাফল্যের ভাগীদার আপনিও। আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম-চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে সেই প্রত্যাশা। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।