২০২৪ সালে মেরিটাইম বিশ্বসংকট কাটানোর পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াই লক্ষ্য

নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে কেটে গেল আরও একটি বছর। ২০২৩ সালজুড়ে চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে গোটা বিশ্ব টালমাটাল সময় পার করেছে। বিগত বছরের সংকট সঙ্গে নিয়েই নতুন বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববাসী। মন্দার শঙ্কায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি তাই ভাবিয়ে তুলছে গোটা বিশ্বকে। এমন অবস্থায় চলতি বছর কেমন যাবে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো মেরিটাইম খাত নিয়েও সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের কমতি নেই।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্য সমুদ্র পথে পরিবহন হয়। এর ফলে বৈশ্বিক বাজার থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতার নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম; সকল কিছুর ওপর মেরিটাইম খাতের প্রভাব অনিবার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর ভূ‚রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ৬০টির বেশি দেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন, পরিবেশবান্ধব নিয়ম-নীতির প্রয়োগ, ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণ, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার জাহাজের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যহীনতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং পানামা খালের দীর্ঘমেয়াদি খরা মেরিটাইম খাতে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। ২০২৪ সালে মেরিটাইম খাতে সুদিন ফিরিয়ে আনতে অংশীজনদের তাই অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি এবং অতি সক্ষমতার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে।

কেমন যাবে নতুন বছর

প্রকৃতির নির্ধারিত নিয়মে পুরনোকে পেছনে ফেলে পৃথিবীতে নতুন বছরের আগমন ঘটেছে। যুদ্ধের দামামার তালে উত্তাল ২০২৪ সাল কীভাবে কাটবে তা শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলা অসম্ভব। তবে বরাবরের মতোই নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে পূর্বানুমান ব্যক্ত করেছে। দেশে দেশে চলমান যুদ্ধের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, মার্কিন ও চীনা অর্থনীতির মন্থর গতি, বিভিন্ন দেশে ক্রমবর্ধমান সুদহার, চীনে নতুন করে করোনাভাইরাস বিস্তারসহ নানা কারণে ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি বিগত বছরের তুলনায় খারাপ সময় কাটাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছর অক্টোবরে প্রকাশিত ইকোনমিক আউটলুকে ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে আইএমএফ। চলতি বছর ২ দশমিক ৯ শতাংশ ধীরগতির বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ব্যক্ত করেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের অলিভিয়েঁ গোরিনকাস। আইএমএফের তথ্যমতে, টানা তৃতীয় বছরের মতো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় ২০২৪ সালে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ আর্থিক মন্দার কবলে পড়বে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানান, যেসব দেশ সরাসরি মন্দার কবলে পড়বে না, তাদের পক্ষেও এর প্রভাব এড়ানো অসম্ভব।

এদিকে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, করোনা অতিমারির পর চলতি বছর সবচেয়ে কম বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা এবং ২০২০ সালের অতিমারির পর এ বছরের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে কম। অর্ধদশকের হিসাবে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমবে। দেশে দেশে সরকার যদি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে পারে তবে চলমান নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব প্রশমিত করা সম্ভব বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

চলতি বছর বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতিতে মন্থরতা বিরাজ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মূল্যস্ফীতির প্রভাব, রপ্তানি হ্রাস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আবাসন ব্যবসায় ধস সর্বোপরি করোনা অতিমারির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের অর্থনীতি গতিহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীনে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা বৈশ্বিক জিডিপিতে ১৯ শতাংশ অবদান রেখেছে। গোল্ডম্যান স্যাকস ও মর্গান স্ট্যানলির মতে, ২০২৪ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। চীনা অর্থনীতির এই মন্থরতা নতুন বছরে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করবে।

অন্যদিকে ২০২৩ সালে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি (২ দশমিক ৬ শতাংশ) অর্জন করলেও চলতি বছর সেই ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ এবং বেকারত্ব ৪ শতাংশ থাকবে বলে পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছে জেপি মর্গান। এদিকে নতুন বছরে ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি গত বছরের মতো দ্রæত কমবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবীদদের মতে, আগামী কয়েক মাস এই অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচনের শঙ্কা রয়েছে। তবে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বেশ কিছু অর্থনীতিবীদ। মূল্যস্ফীতির চাপ কমায় এবং মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছর ইউরোজোনের অর্থনীতি কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করতে আশাবাদী অর্থনীতিবিদরা।

২০২৪ সালকে সুপার ইলেকশন ইয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টিসহ বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব দেশের অর্থব্যবস্থা ও নিয়ম-নীতিতে নানা রকম পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিজয়ী প্রার্থীরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ঋণে ছাড় প্রদান, বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ, শুল্ক মওকুফ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগণ অর্থাৎ প্রায় ২০০ কোটি ভোটার এসব নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬০ শতাংশ আসে এসব দেশ থেকে। এতে বিশ্বজুড়ে বয়ে যাওয়া নির্বাচনের ঢেউ নতুন বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে গভীরভাবে আন্দোলিত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডানপন্থী রাজনীতিবীদরা নির্বাচনে জয়লাভূ করলে  বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পাবার আশঙ্কা রয়েছে।

মেরিটাইম খাতের পূর্বাভাস

সমুদ্র পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ তথা মেরিটাইম খাত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূ‚মিকা পালন করে। গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে মেরিটাইম খাতের প্রভাব অনেকটা ডমিনো ইফেক্টের মতো। সমুদ্র পরিবহন কোনো পর্যায়ে বাধাগ্রস্ত হলে সাপ্লাই চেইন, জ্বালানি মূল্য, পণ্যের জোগান ও দাম সবকিছুর ওপরই সেটার প্রভাব পড়ে। এর ফলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, বীমা সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ী এমনকি ভোক্তারাও সমুদ্র পরিবহন খাতের ভূবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।

প্রভাব ফেলবে অস্থিতিশীল ভূরাজনীতি

বর্তমানে চলতি শতকের ভূয়াবহতম যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ভূ‚রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পালে জোর হাওয়া দিচ্ছে হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষ। বিশ্ববাসী যখন ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অনেকটাই প্রশমিত করে এনেছে তখই নতুন করে আবার যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচল বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে। গত বছর জুলাইয়ে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভূ ভেস্তে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে কৃষ্ণসাগরে অস্থায়ী মানবিক করিডোর চালু করে ইউক্রেন। বর্তমানে এই করিডোর দিয়ে ইউক্রেনে আটকে পড়া জাহাজ ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে। ইউক্রেনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১৫১টি জাহাজ এই মানবিক করিডোরটি ব্যবহার করেছে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ায় গমের বাম্পার ফলনের জেরে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে কৃষ্ণসাগরের ড্রাই বাল্ক রপ্তানি বছরওয়ারি হিসাবে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছর এই পথে জাহাজ পরিচালনার ঝুঁকি বিগত দুই বছরের তুলনায় কমবে।

কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক হবার আগেই বিশ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ লোহিত সাগর নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার সূত্রপাত। পরবর্তীতে গাজায় নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজের ওপর হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে লোহিত সাগরে নিরাপদে পণ্যবাহী জাহাজের চলাচল নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হুতিদের বিরুদ্ধে হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। এমন অবস্থায় মায়েরস্ক ও হ্যাপাগ-লয়েডের মতো শীর্ষ শিপিং কোম্পানি সুয়েজ খালের পরিবর্তে উত্তমাশা অন্তরীপ বেছে নিয়েছে এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে পণ্য পরিবহন করছে।

মেরিটাইম ডেটা অ্যানালাইসিস কোম্পানি সি-ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, হুতি আক্রমণের কারণে লোহিত সাগরে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সাপ্লাই চেইন কোভিড-১৯ অতিমারির প্রথমদিকের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি এরই মধ্যে এতটা বিগড়ে গেছে যে বর্তমানে বাব এল-মান্দেবকে চলাচলের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করলেও জাহাজের রুটিন বিন্যাস স্বাভাবিক হতে অন্তত দুই মাস সময় লেগে যাবে। নতুন বছরে লোহিত সাগরে সৃষ্ট এই জটিলতা তাই সমুদ্র পরিবহন খাতে মারাত্মক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

কঠোর হবে নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল

বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ভূরাজনৈতিক দ্ব›েদ্ব আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম হাতিয়ার। সমুদ্র পরিবহন খাতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া, ইরান, চীনের ভূ‚রাজনৈতিক মতবিরোধ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তীব্রতর হয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালানোয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার জেরে ডার্ক ফ্লিট বা অজ্ঞাতসারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাহাজের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যা গোটা বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন খাতের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে শিপিং কোম্পানিগুলো লোহিত সাগরের পরিবর্তে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে পণ্য পরিবহন করছে

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। এছাড়া গত ১১ ডিসেম্বর শিপিং কোম্পানি, বীমাকারী প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোরভাবে ‘নো ইওর কার্গো’-নীতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন সরকার। নিষেধাজ্ঞা বা রপ্তানি বিধিনিষেধ অমান্য করে কেউ যেন বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের সুবিধা নিতে না পারে তাই এই নীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সমুদ্র পরিবহন ও বাণিজ্যের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতি পালনে ব্যর্থ হলে ফৌজাদারি ও দেওয়ানি আইনে তাদের বিরুদ্ধে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তিমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। কঠোর বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রতিক্রিয়া নতুন বছরে চাহিদা ও জোগানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মেরিটাইম খাতে।

প্রাধান্য পাবে সবুজ রূপান্তর

বর্তমানে বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৩ শতাংশ আসে মেরিটাইম খাত থেকে। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় তিনগুণ হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সময়মতো যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই খাতের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। কয়েক বছর ধরে মেরিটাইম খাতের অংশীজনরা কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করায় সমুদ্র পরিবহনের সবুজ রূপান্তর প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে। চলতি বছর সবুজ রূপান্তরের এই ধারা আরও প্রাধান্য পাবে। পরিবেশ রক্ষায় ২০২৩ সালে গৃহীত নিয়মনীতিগুলো কতটা কার্যকর ভূ‚মিকা পালন করছে এ বছর সেটা পরিলক্ষিত হবে।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন কমিটির (এমইপিসি) ৮০তম অধিবেশনে সংস্থাটির ১ হাজার ৮০০ সদস্য কার্বন নিঃসরণ রোধে কঠোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে। এর পাশাপাশি গত বছর আইএমওর কার্বন ইন্টেনসিটি ইন্ডিকেটর (সিআইআই) কার্যকর হয়। এসব উদ্যোগ চলতি বছর মেরিটাইম খাতে কার্যকর প্রভাব বিস্তার করবে। সেসঙ্গে ইইউর এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম (ইটিএস) ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বলবৎ হয়েছে। ইটিএসের আওতায় চলতি বছর ইউরোপের বন্দরে আসা-যাওয়া করা জাহাজগুলোকে কার্বন নির্গমনের কারণে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার কার্বন শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ডিএনভির তথ্যমতে, ইউরোপ ও এশিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনাকারী একটি কনটেইনার জাহাজকে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ডলার কার্বন শুল্ক পরিশোধ করতে হবে, যা তার বার্ষিক জ্বালানি ব্যয়ের ১০ শতাংশ। পরিচালন ব্যয় কমাতে শিপিং কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে বিকল্প পন্থা হিসেবে শিপ টু শিপ ট্রান্সফার এবং ইউরোপের পরিবর্তে নিকটবর্তী অন্যান্য বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনার কথা ভাবছে, যা নতুন বছরে বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহনের গতানুগতিক ধারাকে বদলে দিতে পারে।

মেরিটাইম খাতের স্টেকহোল্ডাররা বর্তমানে গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গ্রিন শিপিং করিডোর তৈরিতে গুরুত্বারোপ করছে। গøবাল মেরিটাইম ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গ্রিন করিডোর ইনিশিয়েটিভের সংখ্যা গত এক বছরে ২১টি থেকে ৪৪টিতে উন্নীত হয়েছে। আরও অনেক প্রকল্প বর্তমানে পরিকল্পনাধীন এবং প্রাক-বিনিয়োগ পর্যায়ে আছে। গ্রিন শিপিং করিডোরগুলো ২০২৪ সালে মেরিটাইম খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে গ্রিন করিডোর ইনিশিয়েটিভের সংখ্যা ৪৪টিতে উন্নীত হয়েছে

বাধ সাধবে বৈরী পরিবেশ

চলতি বছর বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে লড়তে হবে মেরিটাইম খাতকে। এল নিনোর প্রভাবে ২০২৪ সালজুড়ে প্রতিক‚ল আবহাওয়া বিরাজ করবে। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা স্মরণকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই পরিবর্তন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা নতুন বছরে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে চলতি বছরও পানামায় অনাবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জেরে পানামা খালে সৃষ্ট খরা চলতি বছরও দীর্ঘায়িত হবে এবং পানির সংকট অব্যাহত থাকবে। এমন অবস্থায় ২০২৪ সালেও এই বাণিজ্যপথে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম জাহাজ চলাচল করবে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী, জার্মানির রাইন নদী ও যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাবে। খরার কারণে এসব জলপথে পানির স্তর কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহন, বিশেষত বার্জ চলাচল ব্যাহত হবে। যা সার্বিকভাবে সমুদ্র পরিবহন খাতকে প্রভাবিত করবে।

সর্বত্র প্রযুক্তির প্রয়োগ

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মেরিটাইম খাতকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এআই ব্যবহার করে সমুদ্র পরিবহন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, রুট অপ্টিমাইজেশন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এআই-চালিত রোবোটিকসও অটোমেশন সিস্টেম কার্গোর পরিবহন ঝুঁকি কমিয়ে এবং কার্গো লোডিংয়ের সময় জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বন্দরগুলোয় কার্গো হ্যান্ডলিং সহজ করে তুলছে। এছাড়া এআই-চালিত অ্যানালিটিক্স জাহাজের কার্যক্ষমতা, জ্বালানি ব্যবহার, আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শিপিং কোম্পানিগুলোকে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শিপিং খাতের দক্ষতা ও নিরাপত্তা বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেসঙ্গে মেরিটাইম খাতের খরচও কমেছে। প্রযুক্তি বিষয়ক মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সাল নাগাদ সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এআই এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সে বিনিয়োগ করবে। এর পাশাপাশি জাহাজকে স্বয়ংচালিত করতে, শিপিং খাতে বøকচেইন প্রযুক্তি একীভূ‚ত করতে, মেরিটাইম খাতকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে সর্বোপরি সমুদ্র পরিবহনের সার্বিক উন্নয়নে চলতি বছর ইন্টারনেট অব থিংকস (আইওটি), ক্লাউড-বেজড সিস্টেম, ডিজিটাল টুইনসহ আরও অনেক প্রযুক্তি মেরিটাইম খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূ‚মিকা রাখবে।

ত্বরান্বিত হবে ডিজিটালাইজেশন ও যান্ত্রিকীকরণ

জাহাজ ও বন্দরের কর্মদক্ষতা বাড়াতে, খরচ বাঁচাতে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সমুদ্র পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ মেরিটাইম খাতে যান্ত্রিকীকরণে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অংশীজনরা বর্তমানে স্বয়ংচালিত নৌযান তৈরি এবং অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সুবিধা সম্পন্ন স্মার্ট বন্দর তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হয়ে উঠবে। এ বছর কোনো ক্রু ছাড়া সম্পূর্ণ স্বয়ংচালিত কার্গো জাহাজ কার্যক্রম শুরু করবে। অ্যালায়েড মার্কেট রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক ২৩ দশমিক ১ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩২ সাল নাগাদ স্মার্ট পোর্টস মার্কেটের মূল্য ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছবে।

শক্তিশালী হবে সাইবার নিরাপত্তা

বিগত কয়েক বছরে লজিস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে সাইবার হুমকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, এই খাতে সাইবার আক্রমণের প্রচেষ্টা ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইবার হামলার মাধ্যমে হ্যাকাররা কার্গোর গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে অবৈধভাবে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করছে। এর ফলে নৌ-চলাচল ব্যাহত হবার পাশাপাশি সংঘর্ষ ও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। সাইবারআউলের গেøাবাল ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মীদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে মেরিটাইম খাতের ৯৫ শতাংশ সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। মেরিটাইম খাতের অটোমেশন কাজের নির্ভুলতা ও ধারাবাহিকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাইবার হামলার ঝুঁকি চিহ্নিত করে এবং সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২৪ সালে এআই ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য ও সিস্টেমগুলোকে সুরক্ষিত করতে এবং সমুদ্র পরিবহনকে নিরাপদ রাখতে কাজ করবে মেরিটাইম খাত।

চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা আরেক ধাপ বাড়বে

কোভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী কনটেইনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ নির্মাণে উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হয়। নবনির্মিত সেসব জাহাজ গত বছর থেকে বাণিজ্যিক নৌবহরে যুক্ত হতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছর সরবরাহকৃত নতুন জাহাজের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বিমকোর প্রধান শিপিং বিশ্লেষক নিলস রাসমুসান জানান, ২০২৪ সালে ৩১ লাখ টিইইউর ৪৭৮টি নতুন কনটেইনার জাহাজ এমএসসি, মায়েরস্ক, সিএমএ সিজিএমসহ অন্যান্য শিপিং কোম্পানির বহরে যুক্ত হবে। এর ফলে কনটেইনার বহরের ধারণক্ষমতা চলতি বছর ১০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে দেশে দেশে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি, কঠোর সুদহার নীতি এবং ভূ‚রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে ২০২৪ সালে কনটেইনার চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কনটেইনার এক্সচেঞ্জের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশের মতে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই বছর চাহিদার পরিমাণ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাবে মেরিটাইম খাত। জোগানের সাথে পাল্লা দিয়ে চাহিদার পরিমাণ না বাড়ায় ২০২৪ সাল থেকে কনটেইনার শিপিংয়ের অতিসক্ষমতা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ড্রিউরির বৈশ্বিক জোগান-চাহিদা সূচক অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জোগানের পরিমাণ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা মাত্র ২ শতাংশ বাড়বে, যা সর্বকালের সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাহিদা-জোগানের এই ভারসাম্যহীনতা আগামী কয়েক বছর ধরে কনটেইনার শিপিং খাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

কনটেইনার শিপিংয়ে নিরাশার সুর

পানামা খালে সীমিত আকারে জাহাজ চলাচল এবং কনটেইনার জাহাজের অতি সক্ষমতার দরুন সাম্প্রতিক সময়ে শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েই চলেছে। যার ফলে কনটেইনার জাহাজের ফ্রেইট রেট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত অক্টোবরে ড্রিউরি জানায়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ফ্রেইট রেটে ৩৩ শতাংশ পতন হবার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৩ সালে ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলো আনুমানিক ২ হাজার কোটি ডলার মুনাফা (কর-পূর্ববর্তী) অর্জন করলেও চলতি বছর ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার লোকসানের পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি। ২০০৯ ও ২০২০ সালে মন্দার কারণে কমতে থাকা থ্রুপুটের পরিমাণ বন্দরগুলো দ্রæত পুনরুদ্ধার করতে পারলেও বর্তমানে চলমান সংকট সহসা কাটবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে ড্রিউরি। 

২০২৩ সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে পশ্চিমাদের সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। চলমান সংঘর্ষে লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। দুর্ঘটনা এড়াতে শিপিং কোম্পানিগুলো তাই বিকল্প পথ ব্যবহার করছে, যার ফলে পরিবহন ব্যয় হু-হু করে বাড়ছে। বাড়তি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে ফ্রেইট রেট বাড়াচ্ছে শিপিং কোম্পানিগুলো। তবে ফ্রেইট রেটের এই ঊর্ধ্বগতি অনিশ্চয়তায় ভূরা নতুন বছরে শিপিং খাতের লোকসান আদৌ কমাতে পারবে কিনা তা এখনো সুস্পষ্ট নয়।

২০২৪ সালে অপরিশোধিত ট্যাংকার মার্কেটে কার্গো ভলিউম ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

আশা জোগাচ্ছে ট্যাংকার মার্কেট

এতসব হতাশার মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে ট্যাংকার মার্কেট। মূলত এশিয়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক তেলের চাহিদা বাড়ছে। শিপব্রোকার এক্সক্লুসিভের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে চীনে তেলের চাহিদা ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। অন্যদিকে আমেরিকার থেকে অপরিশোধিত তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্যাংকার জাহাজ চলাচলের গড় দূরত্ব বাড়ছে তথা টন-মাইল অনুপাত উন্নত হচ্ছে; যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপথে তেল পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানায় চলতি বছর দৈনিক তেলের চাহিদা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গায়ানা ও যুক্তরাষ্ট্রে তেল উত্তোলন বৃদ্ধি এবং ওপেকভুক্ত দেশগুলো থেকে তেলের সরবরাহ অব্যাহত থাকায় ২০২৪ সালে তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছে আইইএ। নতুন বছরে তেলের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ট্যাংকার জাহাজের চাহিদা। বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলের (বিমকো) পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর অপরিশোধিত ট্যাংকার মার্কেটে কার্গো ভূলিউম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here