প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট আপদের কারণে লোহিত সাগর, কৃষ্ণ সাগর ও পানামা খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটগুলো গতি হারানোর ঝুঁকিতে, যা দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি, খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যাওয়া ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার সংকট তৈরি করতে পারে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে।
নেভিগেটিং ট্রাবলড ওয়াটারস : দ্য ইম্প্যাক্ট অন গোবাল ট্রেড অব ডিসরাপশন অব শিপিং রুটস ইন দ্য রেড সি, দ্য ব্ল্যাক সি অ্যান্ড দ্য পানামা ক্যানেল শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কৃষ্ণ সাগর। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর তো জাহাজ চলাচল বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় মানবিক করিডোর চালুর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এক বছরের মাথায় রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে আসায় আবার অনিরাপদ হয়ে উঠেছে খাদ্যশস্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ এই শিপিং রুট।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সমুদ্র পরিবহন খাতের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে লোহিত সাগরের অস্থিরতা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী কর্তৃক একের পর এক বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সাপ্লাই চেইনের অংশীজনদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এশিয়া থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য পরিবহনের সংক্ষিপ্ততম রুট লোহিত সাগর-সুয়েজ খাল-ভূমধ্যসাগর এড়িয়ে জাহাজগুলোকে এখন আফ্রিকা হয়ে বাড়তি পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই বেড়েছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ খাতে চাপ তৈরি করছে। বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন খাতের আরেকটি যুগান্তকারী রুট হলো পানামা খাল। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্তকারী এই কৃত্রিম খাল আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের মধ্যে দূরত্ব কমিয়েছে প্রায় ৮ হাজার নটিক্যাল মাইল। খরার কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত বছর থেকেই ভুগতে হচ্ছে জলপথটিকে। খাল দিয়ে দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা কয়েক দফায় কমাতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। আঙ্কটাডের হিসাব অনুযায়ী, খালটি দিয়ে জাহাজ চলাচলের সংখ্যা সর্বোচ্চ অবস্থানের তুলনায় ৪২ শতাংশ কমেছে। খাল পাড়ি দেওয়ার জন্য দুই পাশে বিপুল সংখ্যক জাহাজকে অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে। ফলে নামকরা শিপিং কোম্পানিগুলো আপাতত এই খালকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয় মনে করছে।