তাইপে পোর্ট

তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হলো তাইপে পোর্ট। দেশটির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কনটেইনার ফ্যাসিলিটি রয়েছে এখানে। তাইওয়ানের নবীনতম আন্তর্জাতিক বন্দর হলেও খুব দ্রুত এটি দেশটির কার্গো পরিবহনের গেটওয়ে হয়ে উঠছে। এ কারণে বন্দরটিকে আরও কার্যক্ষম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তান-শুই নামেও পরিচিত তাইপে পোর্টের অবস্থান তাইওয়ানের বালি ডিস্ট্রিক্টে। জায়গাটি তাইওয়ানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর কিলাং পোর্টের নিকটে। কনটেইনার ফ্যাসিলিটির দিক থেকে তাইপে পোর্ট এই কিলাং পোর্টকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাইপে পোর্টের পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রয়েছে তাইওয়ান ইন্টারন্যাশনালস পোর্টস করপোরেশন।

তাইপে পোর্ট গড়ে উঠেছে একাধিক পর্যায়ে, যেখানে তাইওয়ানের ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিভিল কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির মুন্সিয়ানার ভালো প্রমাণ পাওয়া গেছে। বন্দরটি নির্মাণ করতে গিয়ে উপক‚লীয় ভূমিকে নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। নির্মাণ করতে হয়েছে একটি কৃত্রিম হারবার। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার ব্যয়ে একটি খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই খননকাজ এমনভাবে পরিচালনা করা হয়েছে, যেন বন্দরের সক্ষমতাও বাড়ে, আবার পরিবেশেরও তেমন কোনো ক্ষতি না হয়। খননের ফলে বন্দরের ফেয়ারওয়ে ও টার্নিং বেসিনের গভীরতা ১৬ থেকে ১৭ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।

বন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ১৯৯৩ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে। শেষ হয় ২০১২ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর বন্দরের মোট ওয়াটার এরিয়া ২ হাজার ৮৩৩ হেক্টর ও ল্যান্ড এরিয়া ২৬৯ হেক্টরে উন্নীত হয়। এতে বন্দরের মোট আয়তন দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর (৭ হাজার ৭০০ একর)।

বর্তমানে প্রতি বছরে গড়ে প্রায় তিন হাজার জাহাজ এই বন্দরের সেবা নেয়। তবে বন্দরের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার এখনো হচ্ছে না। তাইপে পোর্টের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ৪০ লাখ টিইইউ। অথচ ২০২২ সালে বন্দরটিতে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ টিইইউ, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৯১ হাজার ১৩২ টিইইউ। সে বছর জটের কারণে কাওসিউং বন্দর থেকে আংশিক কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম তাইপে পোর্টে শিফট করা হয়। এর সুবাদে বন্দরে কনটেইনার থ্রুপুট বেড়ে যায় ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। লয়েড’স লিস্টের ২০২৩ সালের শীর্ষ ১০০ কনটেইনার পোর্টের তালিকায় তাইপে পোর্টের অবস্থান ৯৮তম। ২০২২ সালের তালিকায় ছিল ৮৮তম।

সর্বাধুনিক বন্দর ব্যবস্থায় যত ধরনের সুবিধাদি থাকা দরকার, তার সবই রয়েছে তাইপে পোর্টে। তারবিহীন সেন্সর কিংবা স্বয়ংক্রিয় লোডিং-আনলোডিং অপারেশনের মাধ্যমে বন্দরের কার্যদক্ষতা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। কনটেইনার টার্মিনালের পাশাপাশি জেনারেল কার্গো টার্মিনালেও এই ধরনের সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তাইপে পোর্টে ১৪টি অপারেশনাল ডক রয়েছে, যেগুলোয় পেট্রোকেমিক্যাল, কনটেইনার ও বাল্ক পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। কেবল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্যই সাতটি বার্থ রয়েছে বন্দরটিতে। তাইপে পোর্টে কার্গো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বাল্ক কার্গো রাখার জন্য রয়েছে ছয়টি গুদাম। কনটেইনার রাখার জন্য রয়েছে পৃথক পাকা জায়গা।

তাইপে পোর্টের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০৪১ সাল নাগাদ বন্দরের ল্যান্ড এরিয়া আরও ১ হাজার ৩৮ হেক্টর বাড়ানো হবে, যেখানে গড়ে উঠবে নতুন টার্মিনাল, ওয়্যারহাউস ও উইন্ড-পাওয়ার ফ্যাসিলিটি। এখন পর্যন্ত এই সম্প্রসারিত অংশের ৪৫ শতাংশ বা ৪৭১ হেক্টর জমির উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here