চীনের ২১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি

চীন সরকার ও সে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় ৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্প এবং প্রযুক্তি খাতে সহায়তা দেবে তারা। এ ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ঢাকার পাশে থাকবে বেইজিং।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নানা খাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এ বৈঠক হয়েছে। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে শি জিনপিং বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে ড. ইউনূসকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। দু’দেশের সম্পর্ক আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ও চীন ১ চুক্তি, ৮ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে এসব নথি সই হয়।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আব্দুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, দুই দেশ অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি করেছে। এ ছাড়া সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে মোট আটটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চীনের শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর, রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং হৃদরোগ সার্জারি যানবাহন প্রদান বিষয়ে পাঁচটি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

বাসস জানায়, ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা চীনের উদ্যোক্তাদের প্রতি বাংলাদেশে শিল্পে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানোর পর এসব অঙ্গীকার এসেছে।

চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে আরও প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শি জিনপিং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশকে চীনের উন্নয়ন থেকে অভিজ্ঞতা নেওয়া এবং বাংলাদেশে দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেন শি জিনপিং। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের দুই বছর পরও অর্থাৎ ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে আরও চীনা বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে চায় বেইজিং।

শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশে একটি বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্প পার্ক নির্মাণে সহায়তা করবে বেইজিং। তিনি চীনে আরও বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি, বিআরআইয়ে সহযোগিতা এবং ডিজিটাল ও সমুদ্র অর্থনীতির পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। ইউনান এবং চীনের অন্যান্য প্রদেশের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন জিনপিং। এ ছাড়া বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন শি জিনপিং। ড. ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীনের সমর্থন চেয়েছেন এবং বাংলাদেশে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি চীনা প্রকল্প ঋণের সুদের হার কমানো এবং ঋণের প্রতিশ্রুত ফি মওকুফেরও দাবি জানান। এ সময় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার কথা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। জিনপিং জানান, বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের স্বাদ গ্রহণ করেছেন তিনি। এসবের গুণমানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে ফল আমদানিতে প্রস্তুত।

বৈঠকে চীন থেকে যুদ্ধবিমান ক্রয় এবং কুনমিং ও বাংলাদেশের বন্দরের যোগাযোগের মাল্টিমডাল পরিবহন বিষয়েও আলোচনা করেন দুই নেতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here