আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস সূচকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা অগ্রগতি হলেও, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখনও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অ্যাগিলিটি ইমার্জিং মার্কেটস লজিস্টিকস ইনডেক্স (এইএমএলআই) অনুযায়ী, লজিস্টিকস খাতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। ২০২২ সালে ৫০টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৯তম, যা ২০২৩ সালে ৩৫তম এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে আরো দুই ধাপ এগিয়ে ৩৩তম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হাইটস হোটেলে দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জস, অপরচুনিটিজ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড ইন শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মো. মামুন হাবিব। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্স (এলপিআই) ২০২৩ অনুযায়ী ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম, যেখানে স্কোর ছিল ৫-এর মধ্যে মাত্র ২.৬। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৩৮ এবং শ্রীলংকার অবস্থান ৭৩।
এছাড়া, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কনটেইনার পোর্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স (সিপিপিআই) ২০২৩ অনুযায়ী, শ্রীলংকার কলম্বো বন্দর বিশ্বব্যাপী ৪০তম স্থানে রয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৩৩৯তম। এ সূচক বন্দরের কার্যক্ষমতা মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়, যেখানে জাহাজের আগমন, টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম এবং সামগ্রিক দক্ষতা বিবেচনা করা হয়।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘লজিস্টিকস উন্নয়নে দেশ পাঁচ দশক পিছিয়ে আছে। সাম্প্রতিক লজিস্টিকস কৌশল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই খাতে সঠিক কোনো নীতি, নিয়ন্ত্রক কাঠামো বা বাজার উন্নয়ন ছিল না। মার্কিন শুল্ক এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে রপ্তানি ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হলেও, লজিস্টিকস-এর দক্ষতা বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। দক্ষতা বাড়াতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি অপারেটরদের জন্য উন্মুক্ত করা জরুরি। চট্টগ্রাম বন্দরে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একজন বৈশ্বিক অপারেটরকে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই’।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘চট্টগ্রামের বে টার্মিনালে একটি মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস হাবের নির্মাণ কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। পরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে রেল, সড়ক ও সমুদ্রপথকে সমন্বয় করে এটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বে টার্মিনাল ব্রেকওয়াটার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। বে টার্মিনালের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৩৬ সালের মধ্যে বে টার্মিনাল ৫.৩৬ মিলিয়ন টিইইউ কন্টেইনার পরিচালনা করতে সক্ষম হবে’।
নৌপরিবহন সচিব আরো বলেন, ‘বে টার্মিনাল একটি পিপিপি মডেলে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত একটি বে টার্মিনাল ঠিকাদারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালও একটি স্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে অক্টোবরের মধ্যে একজন বৈশ্বিক অপারেটরের কাছে হস্তান্তর করা হবে’।
জাতীয় লজিস্টিকস নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি শীঘ্রই সংশোধন করা হবে এবং প্রধান উপদেষ্টার ও মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে দুটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এই নীতির অধীনে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে’।