ইকো সাউন্ডার হচ্ছে আধুনিক নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপরিহার্য একটি যন্ত্র। এটি দিয়ে পানির গভীরতা এবং এর তলদেশে কোনো বস্তুর উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। ১৯১৩ সালে জার্মান উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার বেহম এটির প্যাটেন্ট নেন। ইকো সাউন্ডার যন্ত্র থেকে এক ধরনের শব্দতরঙ্গ নিক্ষেপ বা প্রেরণ করা হয়, যা সমুদ্রের তলদেশ কিংবা নিমজ্জিত অন্য কোনো বস্তুতে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। সেই শব্দের প্রেরণ, নির্গমণ ও ফিরে আসার সময় রেকর্ড করে, পানিতে শব্দের দ্রুতি গণনা করে তলদেশের গভীরতা মাপা হয়। ইকো সাউন্ডারের কারণে ডুবোচরে আটকে যাওয়া বা পানির নিচে অযাচিত কোনো বস্তুর সাথে সংঘর্ষের ভয় থাকে না। পানির গভীরতা অনুযায়ী নৌযান প্রয়োজনীয় গতিতে চলতে পারে।
ইকো সাউন্ডার হাই ফ্রিকোয়েন্সির, সাধারণত ১০ থেকে ২০০ কিলোহার্টজ শব্দতরঙ্গ উল্লম্বভাবে সমুদ্রের নিচে প্রেরণ করে। বায়ুর চেয়ে পানি প্রায় তিন গুণ বেশি দ্রুত শব্দ পরিবহন করে, আর সমুদ্রপৃষ্ঠে শব্দের বেগ সেকেন্ডে ১ হাজার ৫০০ মিটার। শব্দ প্রেরণ এবং ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে ২ দিয়ে ভাগ করে গতিবেগ দিয়ে গুণ করলে কাক্সিক্ষত গভীরতা পাওয়া যায়। ধরা যাক, সমুদ্রের মাঝখানে থাকা একটি জাহাজের ইকো সাউন্ডার থেকে শব্দ প্রেরণের ৩ সেকেন্ড এর প্রতিধ্বনি সোনারে ধরা পড়ল। সেক্ষেত্রে এই স্থানে সমুদ্রের গভীরতা ২২৫০ মিটার। যদিও একেবারে নির্ভুল পরিমাপ পেতে হলে এই ফলাফলের সাথে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, সমুদ্রের জলপ্রবাহের গতি এবং বায়ুচাপের মান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
সমুদ্র তলদেশের গভীরতা পরিমাপ ছাড়াও হাইড্রোগ্রাফিক ও টপোগ্রাফিক জরিপ, মৎস্য বিচরণস্থল, জিপিএস সিস্টেমে ইকো সাউন্ডারের বহুল ব্যবহার রয়েছে।