গভীর সমুদ্র। আশপাশে দৃষ্টিসীমায় আর কোনো জাহাজ বা ভূখণ্ড নেই। এই অবস্থায় প্রচণ্ড ঝড় উঠল। বিশালাকার ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজ বা ফিশিং বোট একপাশে কাত হয়ে গেল। যেকোনো সময় ডুবে যাওয়ার দশা। এমন সময় একজন ক্যাপ্টেন নিজের ও ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তায় সাহায্য চেয়ে রেডিওবার্তা পাঠাবেন। কেবল দুটি শব্দই এ অবস্থায় পুরো একটি বাক্যের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর সেটি হলো ‘মে ডে’।
মানুষ শত শত বছর ধরে নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কোড ওয়ার্ড বা সাংকেতিক শব্দ ও বার্তা ব্যবহার করে এসেছে। মে ডে এমনই একটি কোড ওয়ার্ড। তবে এই সংকেতের অর্থ সর্বজনবিদিত। এর ব্যবহারও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মে ডে শব্দযুগলটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘মেদে’ থেকে, যার অর্থ সাহায্য করুন। জরুরি সাহায্যবার্তা হিসেবে ফরাসিরা শব্দটি ব্যবহার করত, যা পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও জাহাজের ক্যাপ্টেন, বোটচালক ও অন্যরা ব্যবহার করতে শুরু করেন। শব্দটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সাহায্য প্রার্থনা নির্দেশক খুবই ছোট্ট শব্দ এটি। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে যখন বিশদ বার্তা পাঠানোর সুযোগ থাকে না, তখন এটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তবে ফরাসি ভাষা তো আর সব জায়গায় ব্যবহার হয় না। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য শব্দকে সাহায্যবার্তা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই তাগিদ থেকেই ১৯২৭ সালে ‘মেদে’-কে সামান্য পরিবর্তন করে ‘মে ডে’ স্ট্যান্ডার্ড সিগন্যাল হিসেবে গ্রহণ করে ইন্টারন্যাশনাল রেডিও টেলিগ্রাফ কনভেনশন। বিপজ্জনক আবহওয়ার কবলে পড়া অথবা ডুবন্ত কোনো জাহাজ অথবা জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন এমন কোনো নৌযান থেকে রেডিওর মাধ্যমে ‘মে ডে’ বার্তা পাঠানোর পর নিকটবর্তী যারাই সেটি শুনবে, দ্রুত তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাবে। এটি কেবলই নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে আইনসিদ্ধ অবশ্য কর্তব্য। নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড বা অন্য যেকোনো বাহিনীও এই বার্তা পেলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিপদগ্রস্ত নৌযানের সহায়তায় এগিয়ে যায়।