ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপদ মেরিটাইম তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও IORIS প্রবর্তন

সমুদ্র বিষয়ক শিল্পসমূহ বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবক হয়ে ওঠার পাশাপাশি এই খাতে নিরাপত্তা ঝুঁকির মাত্রা ও ধরন ক্রমশঃ বাড়ছে। জলদস্যুতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের সাইবার হামলার ঝুঁকি বিবেচনায় মেরিটাইম খাতকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে বহুমুখী নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে। সময়ের সাথে সাগর-মহাসাগরে নিরাপত্তা ঝুঁকির ধরন ও বিস্তৃতি বেড়েছে। বিশ্বায়নের যুগে সমুদ্র বাণিজ্যের প্রসারের সুবাদে জাহাজ চলাচলের ব্যস্ততা বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আরেকটি বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার অপরাধ। মেরিটাইম খাতের নিরাপত্তা নিয়ে বহুমাত্রিক যে সংকট, তা আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সারা বিশ্বের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জের নাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোগুলোতে সমুদ্র নিরাপত্তা বাড়াতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি বিধিবিধান চালু, নজরদারি বৃদ্ধিসহ অবশ্যপালনীয় বিভিন্ন সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মাধ্যমে সমুদ্র শিল্পকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

বিশ্বায়নের এই যুগে তা হতে হবে সমন্বিতভাবে একে অপরের সাথে তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো ধারণাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও যুগোপযোগী ও বহুমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। সর্বশেষ গত ০৩-১৩ মার্চ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ইন্দো-প্যাসিফিক ইনফরমেশন শেয়ারিং টুল ‘IORIS’ ব্যবহার বিষয়ক দুইটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। দেশের বন্দর খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার সরকারের প্রয়াসকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি মহোদয়ের নির্দেশনায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, IORIS ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি মেরিটাইম ইনফরমেশন শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। প্রশিক্ষণের ২ ধাপে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২৮ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছে। এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল মেরিটাইম ইনফরমেশন টুলের মাধ্যমে মেরিটাইম খাতের স্টেকহোল্ডাররা কিভাবে সহজেই তাদের কর্মকান্ডের তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা মেরিটাইম স্টেকহোল্ডাররা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শুধু তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও রিজিওনাল থ্রেট, হিউম্যান ট্রাফিকিং, নৌপথে অবৈধ চোরাচালান ও নৌপথের বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানতে ও জানাতে পারবে। দেশের সকল বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলনে ইইউ প্রশিক্ষকের এই ধরণের প্রশিক্ষণের ফলে আধুনিক ‘IORIS’ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে সংশ্লিষ্ট বন্দরসমূহ যা FAL কনভেনশনের প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন হিসেবে গণ্য হবে।

১৩ মার্চ প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেরিটাইম সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মূলত এই প্রশিক্ষণের আয়োজন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো বিষয়ক ছয়জন প্রশিক্ষক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যারা ভবিষ্যতে ঊট তথা আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে ‘IORIS’ প্রশিক্ষণ দিতে  সক্ষম হবেন। 

তিনি আরও বলেন, উক্ত প্রশিক্ষণ আয়োজনে পরিচালক ক্যামিরিও থেকে শুরু করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞান বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরের সম্ভাবনাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেপ্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রশিক্ষণটি বন্দর খাতের উন্নয়নে একটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here