২০২৫ নাগাদ গ্রিন শিপিং করিডোর গড়ে তোলার প্রত্যয় অস্ট্রেলিয়া-সিঙ্গাপুরের

২০২৫ সাল নাগাদ নিজেদের মধ্যে একটি পরিবেশবান্ধব ও ডিজিটাল শিপিং করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর। গত বছরের অক্টোবরে ‘গ্রিন শিপিং কো-অপারেশন’ চুক্তি স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় এই প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছে তারা। কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে দেশ দুটি।

চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া সরকারের অবকাঠামো, পরিবহন, আঞ্চলিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ও কলা বিভাগ (ডিআইটিআরডিসিএ) এবং সিঙ্গাপুরের মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি (এমপিএ) শিপিং খাতকে কার্বনমুক্ত করা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আনতে চাইছে। আর এ লক্ষ্যে তারা বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জ্বালানি খাতের ভ্যালু-চেইন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ডিআইটিআরডিসিএ ও এমপিএ সমুদ্র শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে অভিন্ন যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে, সেসব বিষয়গুলো শনাক্ত ও সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে স্বল্প নিঃসরণকারী ও নিঃসরণমুক্ত জ্বালানির সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলা, বন্দরের সেবা কার্যক্রমগুলোকে পরিবেশবান্ধব করা এবং পরিচ্ছন্ন মেরিন ফুয়েলের উৎস উন্নয়নে বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে যেসব পণ্য পরিবহন হবে, সেগুলোর হ্যান্ডলিং কার্যক্রমকে পেপারলেস করতে ডিজিটাল শিপিং সলিউশন কী হতে পারে, তা অনুসন্ধানেও কাজ করবে তারা।

সম্প্রতি ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া-ইস্ট এশিয়া গ্রিন করিডোর কনসোর্টিয়ামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলোর মধ্যে আকরিক লোহা বাণিজ্যের যে রুট রয়েছে, সেটিতে ২০২৮ সাল নাগাদ অ্যামোনিয়া-চালিত জাহাজ চালু করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খনিজ পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। এর মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে মোট যে পরিমাণ আকরিক লোহা রপ্তানি হয়, তার বেশিরভাগেরই গন্তব্য হলো এশিয়া।

বৈশ্বিক নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টায় নিজেদের অবস্থান থেকে অবদান রাখার প্রচেষ্টা রয়েছে সমুদ্র পরিবহন খাতের। জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনেরও (আইএমও) এ বিষয়ে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। তবে এসবের বাইরে বন্দর কর্তৃপক্ষগুলো পরিবেশবান্ধব শিপিং রুট প্রতিষ্ঠায় স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিচ্ছে, যার অন্যতম হলো গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা।

গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রথম উত্থাপিত হয় ২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬-তে। সম্মেলনে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ ২২টি দেশ। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্র পরিবহন খাতে কয়েকটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা। ২০২৫ সাল নাগাদ অন্তত ছয়টি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও কয়েকটি নিঃসরণমুক্ত রুট কার্যকর হবে বলে কপ২৬ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

গ্রিন করিডোর কোনো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নয়। এটি পুরোপুরি ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত। তবে একটি-দুটি করে যখন বিশ্বের সব ট্রেডিং রুটই যখন গ্রিন করিডোর হয়ে যাবে, তখন সেটি নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হয়ে যাবে। এগুলো হলো এমন শিপিং রুট, যেখানে কোনো নিঃসরণ থাকবে না। এসব রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো ব্যবহার করবে সবুজ জ্বালানি। দুই বা ততোধিক বন্দরের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব করিডোর গড়ে উঠবে।

গত বছর গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি করে সিঙ্গাপুর বন্দর, যেখানে বিকল্প জ্বালানিনির্ভর শিপিং রুট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কার্যক্ষমতা ও পণ্য পরিবহনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর কাজে পারস্পারিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া সিঙ্গাপুর বন্দরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও লং বিচ বন্দর, সুইডেনের গোথেনবার্গ বন্দরের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম ও বেলজিয়ামের নর্থ সি পোর্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের সঙ্গে জাপানের টোকিও ও ইয়োকোহামা বন্দরকে গ্রিন করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত করতে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here