পানিতে জাহাজের গতিবেগ মাপার অন্যতম প্রাচীন যন্ত্র চিপ লগ বা লগ। যন্ত্রটিকে অনেক সময় মেরিটাইম লগ নামেও ডাকা হয়। খ্রিস্টীয় সাল গণনার শুরুর দিকে এ কাজে একটি ছোট কাঠের টুকরা ব্যবহার করা হতো, যার এক প্রান্তে দড়ি বেঁধে চলন্ত জাহাজের একেবারে সম্মুখভাগ থেকে পানিতে ফেলা হতো। কত সময়ে জাহাজ কাঠের টুকরাকে স্পর্শ করছে, সেটি নির্ণয় করে ঘণ্টাপ্রতি জাহাজের গতিবেগ মাপা যেত। অবশ্যই এর পরিমাপ একেবারে নিখুঁত হতো না, তবে কাছাকাছি মান অন্তত পাওয়া যেত।
ষোল শতকের দিকে কেবল কাঠের টুকরা থেকে চিপ লগ তার সর্বশেষ রূপ পায়। গোলপাই আকারের একটি মসৃণ কাঠের চাকতির চারদিকে সিসার পাত দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো। ফলে টোয়িং ছাড়াই এটি সোজাভাবে ভেসে থাকতে পারত। সমান দৈর্ঘ্য পরপর বেশ কয়েকটি গিঁটযুক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে জাহাজের পেছনের অংশ থেকে লগটিকে পানিতে ফেলার পর কত সময়ের মধ্যে পুরো দড়িটি লগের টানে পানিতে চলে যাচ্ছে, একটি স্যান্ড গ্লাসের সাহায্যে সেটি মাপা হতো। লাইন আর লগ পানি থেকে তুলে দড়ি বা লাইনের দৈর্ঘ্যকে স্যান্ড গ্লাস থেকে প্রাপ্ত সময় দিয়ে ভাগ করলেই একেবারে নির্ভুলভাবে জাহাজের গতিবেগ পাওয়া যেত।
উনিশ শতকে এসে চিপ লগের বদলে টোওড রোটর বা প্রপেলারের সাথে সংযুক্ত স্বয়ংক্রিয় স্পিড অ্যান্ড ডিসটেন্স মেজারিং ইকুইপমেন্টের লাইনের মাধ্যমে জাহাজের গতি মাপা শুরু হয়। বর্তমানে পাইটোমিটার লগ এবং ইলেকট্রনিক লগ নামে দুই ধরনের লগ ব্যবহার করে গতিবেগ নির্ণয় করা হয়। সকল ধরনের লগই জাহাজের তলদেশে স্থাপিত হয়, যারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জাহাজের গতি মেপে ব্রিজের মনিটরে প্রদর্শন করে।