দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস পর জাপানি বাল্কার এমভি ওয়াকাশিও নাটকের অবসান হয়েছে। মরিশাসের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটানোর দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাজের ভারতীয় ক্যাপ্টেন সুনীল কুমার নন্দেশ্বর ১৬ মাস বন্দী জীবন কাটানোর পর কারামুক্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। জাহাজটির দণ্ডপ্রাপ্ত সেকেন্ড অফিসারও কারাভোগ শেষ করে নিজ দেশ শ্রীলংকায় ফেরার পথে রয়েছেন।
২০২০ সালের ২৫ জুলাই মরিশাস উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্রসীমায় প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা খায় মিতসুই ওএসকে লিমিটেডের (এমওএল) ভাড়া করা জাহাজ ওয়াকাশিও। এরপর জাহাজ থেকে তেল নির্গত হতে শুরু করে। আগস্টের মাঝামাঝি জাহাজটি দুই ভাগে ভেঙ্গে পড়ে। এই সপ্তাহ দুয়েক সময়ের মধ্যে জাহাজ থেকে বেশিরভাগ তেল অপসারণ করা সম্ভব হলেও প্রায় ১ হাজার টন তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মরিশাস সরকার সেই ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করে।
এরপর মরিশাসের আদালতে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়। শুনানিকালে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসার নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেন। বিচারক তাদের স্বীকারোক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হলেও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি পরিবেশগত বিষয়ে কঠোর বার্তা পৌঁছনোর জন্য তাদের কারাদণ্ড দেন।
এদিকে মরিশাসের কারা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা রয়েছে একজন কারাবন্দীর দণ্ড কমিয়ে দেওয়ার। ওয়াকাশিওর ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারের উত্তম আচরণের কারণে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের দণ্ড মওকুফ করে মুক্তি দিয়েছে।
ডিসেম্বরে আদালতের শুনানি চলাকালে ৫৮ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন নন্দেশ্বর স্বীকার করেন, দুর্ঘটনার সময়ে তিনি জাহাজের এক ক্রুর জন্মদিন উদযাপন করছিলেন। তিনি আরও স্বীকার করেন, ক্রুরা যেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সিগন্যাল পাওয়ার জন্য তিনি জাহাজটির গতিপথ পরিবর্তন করে উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। এর আগেও কয়েকবার তিনি এমন অনুমতি দিয়েছেন বলে শুনানিতে স্বীকার করেন এবং এর জন্য মরিশাসবাসীর কাছে ক্ষমা চান তিনি।
জাহাজের সেকেন্ড অফিসার জানান, দুর্ঘটনার সময় তিনি ওয়াচ অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তিনিও সেসময় জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নেন এবং জাহাজটি অটোপাইলট অপশনে ছিল। তাদের কাছে মরিশাসের সঠিক চার্ট না থাকলেও তারা জাহাজের ইকো সাউন্ডারের সহায়তা নেননি বলে আদালতকে জানান।
ওই দুর্ঘটনার পর মরিশাস সরকার ওয়াকাশিওর অন্য ক্রুদেরও আটক করেছিল। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসার দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় ফার্স্ট অফিসার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্য ক্রুরা আগেই মুক্তি পেয়েছিলেন।