চার্লসটন বন্দর

default

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর হলো পোর্ট অব চার্লসটন। বন্দর কমপ্লেক্সটি বেশ বড়, তিনটি মিউনিসিপ্যালিটি জুড়ে এর বিস্তৃতি। এগুলো হলো চার্লসটন, নর্থ চার্লসটন ও মাউন্ট প্লিজ্যান্ট। বন্দরটিতে ছয়টি পাবলিক টার্মিনাল রয়েছে, যেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। সবগুলোরই মালিক ও পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হলো সাউথ ক্যারোলিনা পোর্টস অথরিটি (এসসিপিএ)। টার্মিনালগুলোয় কনটেইনার, মোটরগাড়িসহ সব ধরনের রোলিং স্টক, নন-কনটেইনারাইজড পণ্য, প্রজেক্ট কার্গো সবই হ্যান্ডলিং হয়। এছাড়া রয়েছে একাধিক বেসরকারি টার্মিনাল, সেগুলোয় প্রধানত পেট্রোলিয়াম, কয়লা, ইস্পাতের মতো বাল্ক কমোডিটি হ্যান্ডলিং করা হয়। প্রমোদতরী পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাদিও রয়েছে চার্লসটন বন্দরে।

একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে চার্লসটন শহরের পত্তন হয় ১৬৭০ সালে। চার্লসটন নামটি এসেছে সার্লস টাউন থেকে। চার্লসটন উপদ্বীপটির একটি বিশেষ সুবিধা ছিল। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হারবার ছিল সেখানে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়েই সেখানে একটি বন্দর গড়ে তোলা হয়, যেটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা ১৬৮২ সালে। ওই সময় থেকে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের (১৮৬১-৬৫) সূচনা পর্যন্ত অর্থাৎ পৌনে দুইশ বছর ধরে এই বন্দর দিয়ে কাঠ, পশম, চামড়া, চাল, নীল, তুলা, তামাক ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আঠারো শতকের শেষ অব্দি প্রচুর পরিমাণে আফ্রিকান দাস আমেরিকায় আনা হতো এই বন্দর দিয়ে। এসব বাণিজ্যের সুবাদে চার্লসটনের একসময়ের ছোট্ট সেই কলোনির পরিসর বড় হতে শুরু করে।

গৃহযুদ্ধের কারণে চার্লসটন বন্দরের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সি মাইন ও জাহাজের ধ্বংসাবশেষের কারণে এর পোতাশ্রয় জাহাজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সে সময় আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিও ভঙ্গুর ছিল। রপ্তানি কমে গিয়েছিল অনেকখানি। চার্লসটনের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জেটিগুলোও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। তবে চার্লসটন হারবারের জৌলুস ফিরে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বিশ শতকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল মিলিটারি বেজ স্থাপনের সুবাদে চার্লসটন হারবারের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছিল খুব ভালোভাবে। 

১৯২০-এর দশকের শুরুর দিকে চার্লসটনের তৎকালীন মেয়র জন পি গ্রেস চার্লসটন বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং পোর্ট ইউটিলিটিজ কমিশন গঠন করেন। সে সময় চার্লসটন উপদ্বীপের বেশিরভাগ উপকূলীয় সম্পদের মালিক ছিল চার্লসটন টার্মিনাল কোম্পানি। ১৯২২ সালে নগর কর্তৃপক্ষ ১৫ লাখ ডলারে সেই কোম্পানিকে কিনে নেয়। ১৯৪২ সালে গঠিত হয় সাউথ ক্যারোলিনা পোর্টস অথরিটি (এসসিপিএ)। অঙ্গরাজ্যটির সব ধরনের নৌবাণিজ্যের দেখভাল ও উন্নয়নের দায়িত্ব পায় তারা। বর্তমানে চার্লসটন বন্দরের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে।

কার্গো ভ্যালুর দিক থেকে বর্তমানে চার্লসটন বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ বন্দরের একটি। ২০২৩ সালে বন্দরটিতে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার টিইইউ। ২০২৩ সালের লয়েড’স লিস্টে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ কনটেইনার পোর্টের তালিকায় চার্লসটনের অবস্থান ৭৭তম।

বন্দরের ছয়টি পাবলিক টার্মিনাল হলো ইউনিয়ন পিয়ার টার্মিনাল (ক্রুজ টার্মিনাল), কলাম্বাস স্ট্রিট টার্মিনাল, ওয়ান্দো ওয়েলশ টার্মিনাল, হিউ কে লেদারম্যান টার্মিনাল, ভেটারানস টার্মিনাল ও নর্থ চার্লসটন টার্মিনাল। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসসিপিএ চার্লসটন বন্দরের বিদ্যমান সুবিধাদির উন্নয়ন ও নতুন সুবিধা সংযোজনের পেছনে ১০৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের হারবারের গভীরতাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ভাটার সময়েও প্রবেশ ও হারবার চ্যানেলে প্রায় ১৬ মিটার ড্রাফট নিয়ে চার্লসটন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের গভীরতম সমুদ্রবন্দর। পোস্ট-প্যানাম্যাক্স জাহাজগুলো নিয়মিত এই বন্দরের সেবা গ্রহণ করছে। এসসিপিএ সম্প্রতি নর্থ চার্লসটন টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২৮০ একর জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে টার্মিনালটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৫০ লাখ টিইইউতে উন্নীত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here