এজ অব এক্সপ্লোরেশন বা আবিষ্কারের যুগে ইউরোপের মেরিটাইম কমিউনিটির মূল নজর ছিল ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের দিকে। এ সময়ে সমুদ্রাভিযান ছিল আকাশের চাঁদ-তারা দেখে জাহাজের গতিপথ নির্ণয়-নির্ভর। এই পদ্ধতি ছিল বেশ জটিল। গণিতের অনেক হিসাব-নিকাশ ছিল তাতে। নাবিকদের সেগুলো শেখানোর জন্য ইউরোপীয়রা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রকাশ করেছিল পাঠ্যপুস্তক। উদ্ভাবন করেছিল প্রশিক্ষণ ইনস্ট্রুমেন্ট।
তবে শিখন পদ্ধতি হিসেবে কোনটি বেশি সহায়ক তাত্তিক না ব্যবহারিক, স্মৃতিনির্ভরতা না গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, সে বিষয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে। আলোচ্য সময়েও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সে কারণেই ইউরোপীয়রা হাইব্রিড মডেল তৈরি করেছিল, ফলিত বিজ্ঞানের ওপর যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
সেইলিং স্কুল বইটিতে লেখিকা দুই শতাধিক বছরের জাহাজ চলাচলের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। রূপান্তরকালীন সেই সময়ের একটি সচিত্র বিবরণ তিনি প্রকাশ করেছেন বইটিতে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া সে যুগের সমুদ্রযাত্রায় চ্যালেঞ্জ কম ছিল না। নাবিকরা কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন লেখিকা।
মার্গারেট শোটে বইটি শুরু করেছেন ষোড়শ শতকে নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ইবেরিয়ান মডেল দিয়ে। এরপর তিনি নিয়ে গেছেন মেরিটাইম ম্যানুয়াল দিয়ে ঠাসা একটি ডাচ বুকশপে। তারপর পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফরাসি ত্রিকোণমিতির সাথে, যেখানে বলা হয়েছে যে, নেভিগেশন একটি সমকোণী ত্রিভুজ ছাড়া আর কিছুই না। বইটিতে একজন তরুণ ব্রিটিশ নৌ-কর্মকর্তার চোখে আঠারো শতকের সমুদ্র শিল্পকে দেখানো হয়েছে, যিনি দীর্ঘ দুই মাস তার ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজকে ভাসিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সেইলিং স্কুল বইটিতেই প্রথম নেভিগেশন খাতে প্রকাশনা জগতের গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। মার্গারেট শোটে ছয়শ বছরে প্রকাশিত বিপুল সংখ্যক আর্কাইভাল রেকর্ড পড়ে দেখেছেন, যেগুলোর মধ্যে ছিল শত শত পাঠ্যপুস্তক ও অন্তরালে থেকে যাওয়া পাণ্ডুলিপি। এর সুবাদেই সেইলিং স্কুল বইটি সমুদ্র শিল্পের ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও প্রকাশনা খাতের ভূমিকার মধ্যে একটা পরিষ্কার সম্পর্ক টানতে সক্ষম হয়েছেন।
৩২০ পৃষ্ঠার হার্ডকভার বইটির প্রকাশক জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি প্রেস। মূল্য ৬২ ডলার।
আইএসবিএন-১০: ১৪২১৪২৯৫৩৫ আইএসবিএন-১৩: ৯৭৮-১৪২১৪২৯৫৩৩
